ঘোড়া দীঘি
খানজাহান আলী বাগেরহাট এলাকায় ৩৬০টি মসজিদের পাশাপাশি ৩৬০টি দীঘি কেটেছিলেন। এর একটি ঘোড়া দীঘি। ষাট গম্বুজ মসজিদের পশ্চিম পার্শ্বে এই দীঘির অবস্থান। বাগরেহাট জেলা সদরের ষাটগুম্বজ ইউনিয়নের সুন্দরঘোনা গ্রামে খান জাহান (রহ:) যে হাবেলী বা প্রশাসনিক কেন্দ্র গড়ে তোলেন তার নিকটে ষাটগুম্বজ মসজিদের পশ্চিম পাশে আবস্থিত ঘোড়া দীঘি। তবে সবচেয়ে মজার তথ্যা হল, এটিই সম্ভাবত হযরত খানজাহান (রহ:) খনন কৃত এ অঞ্চলের প্রথম দীঘি। ঘোড়াদীঘি নাম করণ নিয়ে প্রবাদ আছে যে- একটি ঘোড়া এক দৌড়ে যত দূর গিয়েছিল, ততটা দির্ঘ্যে খনন করা হয় প্রকান্ড এ দীঘি। কার কার মতে, দীঘি খননের পর খানজাহান (র:) ঘোড়ায় চরে দীঘির চারপাসে ভ্রমন করতেন তা থেকে “ঘোড়াদীঘি” নাম করণ করা হয়। আবার অনেকের মতে, দীঘিটি খননের পূর্বে এ স্থানে তার সেনাদের কুচকাওয়াজ ও ঘোড়দৌড় হতো। আর এ ঘোড়দৌড় থেকে “ঘোড়াদীঘ” নামকরণ হয়েছে।খান জাহান কর্তৃক খনকৃত ৩৬০টি দীঘির মাঝে সুপেয় জলের এই দীঘিটিকে বেশ পবিত্র ধরা হয় বিধায় এটি বেশ জনপ্রিয়। ১৯৮৬ সালে এই দীঘিকেও সংরক্ষিত পুরাকীর্তির (সংরক্ষিত জলাশয়) তালিকাভুক্ত করা হয়। ঘোড়া দিঘীই বাংলাদেশের একমাত্র সংরক্ষিত জলাশয়। আয়তকার দীঘিটি পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা। দীঘিটির আয়তন প্রায় ২০০০’ x ১২০০’। বার মাসই পানি থাকে এ দীঘিতে। এর গভীরতা কোন কোন স্থানে প্রায় ২৪/২৫ ফুট। দীঘির পূর্ব দিকে ইটের পাকা ঘাট আছে। দীঘির দক্ষিণ পাশে ১১টি দৃষ্টিনন্দন শেড তৈরি করা হয়েছে যেন পর্যটকরা ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হলে বিশ্রাম নিতে পরেন। টয়লেট ও ওয়াশরুম নির্মাণ করা হয়েছে, পাঁচ টাকা করে নেওয়া হয়। বসার জন্য চেয়ার, ছাউনি করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে সবুজ ঘাস। চেষ্টা চলছে পর্যটক ফ্রেন্ডলি পরিবেশ তৈরির। ঐতিহাসিক এ দীঘির পানিতে লাল শাপলা ভরপুর। মাছ ধরা নিষেধ সেই ২০০১ সাল থেকে। এখন কেউ কেউ মানত করে কিছু মাছ ছাড়েন। এছাড়া মাছও ছাড়া হয় না। শানবাঁধানো একটি ঘাটও আছে।
কিভাবে যাওয়া যায়
বাগেরহাট জেলা বাস স্ট্যান্ড থেকে বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি, ইজিবাইক/ অটোরিক্সা যোগে ঘোড়া দিঘীতে যাওয়া যায়। ষাট গম্বুজ মসজিদের এর সাথেই এর অবস্থান।