জসীমউদ্দীন
এই গাঁয়ের এক চাষার ছেলে লম্বা মাথা চুল,
কালো মুখের কালো ভ্রমর, কিসের রঙিন ফুল।
কাঁচা ধানের পাতার মতো কচি-মুখের মায়া,
তার সাথে কে মাখিয়ে দেছে নবীন তৃণের ছায়া
জালি লাউয়ের ডগা মতো বাহু দুখান সরু,
গা খানি তার শাওন মাসের যেমন তমাল তরু।
বাদল ধোয়া মেঘে কে গো মাখিয়ে দেছে তেল,
বিজলি মেয়ে পিছ্লে পড়ে ছড়িয়ে আলোর খেল।
কচি ধানের তুলতে এক্সারা হয়তো কোন চাষি,
মুখে তাহার জড়িয়ে গেছে কতকটা তার হাসি ।
কালো চোখের তারা দিয়ে সকল ধরা দেখি,
কালো দাতের কালী দিয়েই কেতাব কোরান লেখি।
জনম কালো, মরন কালো, কালো ভূবনময়;
চাষিদের ওই কালো ছেলে সব করছে জয়।
সোনায় যে জন সোনা বানায়, কিসের গরব তার”
রং পেলে ভাই গড়তে পারি রামধনুকের হার।
কালোয় যে জন আলো বানায়, ভুলায় সবার মন,
তারির পদ রজের লাগি লুটায় বৃন্দাবন।
সোনা নহে, পিতল নহে, নহে সোনাএ মুখ,
কালো বরন চাষির ছেলে জুড়ায় যেন বুক।
যে কালো তার মাঠেরি ধান, যে কালো তাঁর গাও।
আখড়াতে তার বাঁশের লাঠি অনেক মানে নামী,
খেলার দলে তারে নিয়েই সবার টানাটানি।
জারির গানে তাহার গলা উঠে সবার আগে,
শাল-সুন্দি-বেত যেন ও, সকল কাজেই লাগে।
বুড়োরা কয়, ছেলে নয় ও পাগাল লোহা লাগে।
রুপাই যেমন বাপের বেটা কেউ দেখছ হেন?
যদিও রুপা নয়কো রুপাই , রুপার চেয়ে দামি,
এক কালেতে ওরই নামে সব গাঁ হবে নামি ।