শহীদ কাদরী
একটি আংটির মতো তোমাকে পরেছি স্বদেশ
আমার কনিষ্ঠ আঙুলে, কখনও উদ্ধত তলোয়ারের মতো
দীপ্তিমান ঘাসের বিস্তারে, দেখেছি তোমার ডোর কাটা
জ্বলজ্বলে রূপ জ্যোৎস্নায়। তারপর তোমার উন্মুক্ত প্রান্তরে
কাতারে কাতারে কত অচেনা শিবির, কুচকাওয়াজের ধ্বনি,
যার আড়ালে তুমি অবিচল, অটুট, চিরকাল।
যদিও বধ্যভূমি হলো সারাদেশ− রক্তপাতে আর্তনাদে
হঠাৎ হত্যায় ভরে গেল বাংলার বিস্তীর্ণ প্রান্তর,
অথচ সেই প্রান্তরেই একদা ধাবমান জেব্রার মতো
জীবনানন্দের নরম শরীর ছুঁয়ে ঊর্ধ্বশ্বাস বাতাস বয়েছে।
এখন সেই বাতাসে শুধু ঝলসে যাওয়া স্বজনের
রক্তমাংসের ঘ্রাণ এবং ঘরে ফিরবার ব্যাকুল প্ররোচনা।
শৃঙ্খলিত বিদেশির পতাকার নিচে এতকাল ছিল যারা
জড়োসড়ো, মগজের কুণ্ডলীকৃত মেঘে পিস্তলের প্রোজ্জ্বল আদল
শীতরাতে এনেছিল ধমনীতে অন্য এক আকাঙ্ক্ষার তাপ।
আবাল্য তোমার যে নিসর্গ ছিল নিদারুণ নির্বিকার,
সুরক্ষিত দুর্গের মতন আমাদের প্রতিরোধে সে হলো সহায়,
ব্ল্যাক-আউট অমান্য করে তুমি দিগন্তে জ্বেলে দিলে
বিদ্রোহী পূর্ণিমা। আমি সেই পূর্ণিমার আলোয় দেখেছি;
আমরা সবাই ফিরছি আবার নিজস্ব উঠোন পার হয়ে
নিজেদের ঘরে।