শেষ বিকেলের মেয়ে লেখক:জহির রায়হান


♠২০২০ এ পড়া প্রথম বইয়ের রিভিউ♠

বই:শেষ বিকেলের মেয়ে
লেখক:জহির রায়হান
প্রকাশনী:অনুপম প্রকাশনী
মলাট মূল্য:১২০/=

প্রায় পাঁচ মাস পর কোনো বই হাতে তুলে নেয়া। গতবছরের জন্মদিনে পাওয়া বইটা পড়া শুরু করবার পর সেই আগের মতোই ডুবে গিয়েছিলাম,৮০ পৃষ্ঠা শেষ করেই উঠলাম!
আর জহির রায়হানের প্রাঞ্জল আর নদীর জলের মত স্বচ্ছ,সরল লেখনী মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখবে তা আসলে জানা কথাই।
এ উপন্যাস পড়তে পড়তে বারবার মনে হচ্ছিল,
১৯৬০ সালে লেখা এই বইয়ের গল্প,ভাবনাগুলো,কথোপকথন গুলো সেসময় থেকে অনেক অনেক বেশি আগানো ছিল। পড়লে মনেই হবেনা এ বই আজ থেকে ৬০ বছর আগে লেখা! এতোটাই প্রাসংগিক এর ভাবনা,অনুভূতির আখ্যান!

কাসেদ এক ছাপোষা কেরানী। বাবা মারা যাবার পর থেকে তিনসদস্যের পরিবারকে চালিয়ে নিতে যে হয়েছে চাকর,নয়টা-চারটার অফিসে ফাইল,বস,কেরানী,টাইপ রাইটার,চিঠিপত্রে ডুব দিয়ে দিন কাটায়।
অফিসের তিন নম্বর কেরানির এই চাকরিটাঈ শুধু কাসেদের পরিচয় নয়। তার আরেক পরিচয় সে কবি। শব্দদের ঝড় উঠায় সে মাঝেসাঝে খাতার পাতায়,কখনোবা ঝড় উঠে মনে-অজস্র ভাবনাদের!
জীবনখাতায় কাসেদের গল্পে তাকে ঘিরে চরিত্র অনেক।
তার মা,জাহানারা,শিউলি,সালমা,নাম না জানা মকবুল সাহেবের মেজো মেয়ে,বড় সাহেব,নাহার!

জীবনের শৈশব,কৈশোরে কেউ হয়তো সাথে ছিল;
কাউকে সে ভালোবাসে গোপনে,বড় যতন করে;
কেউবা ভালোবাসাবাসি কিংবা না বাসাবাসির মাঝামাঝি অনিশ্চয়তায় বন্দী ;
কেউ সারাজীবনব্যাপী দেয়া ছায়া;
অন্যদিকে কেউবা অনুচ্চারিত ভালোবাসার কাব্য নিয়ে বসে থাকা আজন্মের মায়া!

শেষমেষ জীবনের গোধূলি ঘনাবার আগে,সব অভিমান-অনিশ্চয়তা-দূরত্ব এর দেয়াল ভেংগে কাসেদের নিসংগতায় সংগী হয়ে কে থাকে পাশে?!
উত্তর লেখক দিয়েছেন গল্পের সমাপ্তিতেই!!

উপন্যাসের কথোপকথন এর অংশগুলো বারবার পড়তে দারুণ লাগছিল! সে কথোপকথন হোক কল্পনায় কিংবা বাস্তবে, প্রতিটা অনুভূতির গভীরতা-গাঢ়ত্ব স্পর্শ করছিল মনকে!

শেষ করব প্রিয় একটা অংশ দিয়ে:-

"শিউলি বললো,আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন এই মাত্র লড়াইয়ের ময়দান থেকে পালিয়ে এসেছেন।
কাসেদ বললো,অনেকটা তাই।
শিউলি বললো,তার মানে?
কাসেদ বললো,লড়াই কি শুধু রাজার সাথে রাজাত,একজাতের সংগে অন্য জাতের আর এক দেশের সংগে অন্য দেশেরই হয় না। একটি মনের সংগে অন্য একটি মনেরও লড়াই হয়।
শিউলি মুখ টিপে হাসলো,তার মানে আপনি এতক্ষণ অন্য একটি মনের সংগে পাঞ্জা লড়ছিলেন তাই না? শিউলি থামলো। থেমে আবার বললো,সে মনটি কার জানতে পারি কি?
কাসেদ নীরবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ওর দিকে।তারপর ধীরে ধীরে বললো,সে মনও আমার।আমার নিজের। একজন চায় স্বার্থপরের মতো শুধু পেতে। অন্যজন পেতে জানে না,জানে শুধু দিতে। বিলিয়ে দেয়ার মধ্যেই তার আনন্দ।"

পার্সোনাল রেটিং:৮.৫/১০

হ্যাপি রিডিং ^_^

Post a Comment

Previous Post Next Post