সুকুমার রায়
আজগুবি নয়, আজগুবি নয়, সত্যিকারের কথা –
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হলো ব্যথা !
ছায়া ধরার ব্যবসা করি তাও জানো না বুঝি ?
রোদের ছায়া, চাঁদের ছায়া, সকাল বেলার তাজা,
গ্রীষ্মকালে শুকনো ছায়া ভীষণ রোদে তাজা ।
চিলগুলো যায় দুপুর বেলায় আকাশ পথে ঘুরে
ফাঁদ ফেলে তার ছায়ার উপর খাঁচায় রাখি পুরে ।
কাগের ছায়া বগের ছায়া দেখছি কত ঘেটে –
হাল্কা মেঘের পানসে ছায়া তাও দেখেছি চেটে ।
কেউ জানে না এসব কথা কেউ বোঝে না কিছু,
কেউ ঘোরে না আমার মতো ছায়ার পিছু পিছু ।
তোমরা ভাবো গাছের ছায়া অমনি লুটায় ভুঁয়ে,
অমনি শুধূ ঘুমায় বুঝি শান্ত মতন শুয়ে;
আসল ব্যাপার জানবে যদি আমার কথা শোনো
বলছি যা তা সত্যি কথা, সন্দেহ নাই কোনো ।
কেউ যবে তার রয় না কাছে, দেখতে নাহি পায়,
গাছের ছায়া ছটফটিয়ে এদিক ওদিক চায় ।
সেই সময়ে গুড়গুড়িয়ে পিছন হতে এসে
ধামায় চেপে ধপাস করে ধরবে তারে ঠেসে ।
পাৎলা ছায়া, ফোকলা ছায়া, ছায়া গভীর কালো –
গাছের চেয়ে গাছের ছায়া সব রকমের ভালো ।
গাছগাছালি শেকড় বাকল সুদ্ধ সবাই গেলে,
বাপরে বলে পালায় ব্যামো ছায়ার ওষুধ খেলে ।
নিমের ছায়া ঝিঙের ছায়া তিক্ত ছায়ার পাক
যেই খাবে ভাই অঘোর ঘুমে ডাকবে তাহার নাক ।
চাঁদের আলোয় পেঁপের ছায়া ধরতে যদি পারো,
শুঁকলে পরে সর্দিকাশি থাকবে না আর কারো ।
আমড়া গাছের নোংড়া ছায়া কামড়ে যদি খায়
ল্যাংড়া লোকের ঠ্যাং গজাবে সন্দেহ নাই তায় ।
আষাঢ় মাসের বাদলা দিনে বাঁচতে যদি চাও,
তেঁতুলতলার তপ্ত ছায়া হপ্তা তিনেক খাও ।
মৌয়া গাছের মিষ্টি ছায়া ‘ব্লটিং’ দিয়ে শুষে
ধুয়ে মুছে সাবধানেতে রাখছি ঘরে পুষে !
পাক্কা নতুন টাটকা ওষুধ এক্কেবারে দিশি –
দাম করেছি শস্তা বড়, চোদ্দ আনা শিশি ।