দুঃখজনক হলেও সত্য যে‚ বর্তমান সময়ে আমরা সমাজের প্রচলিত রীতিনীতিকে প্রভূ হিসেবে মেনে নিয়েছি বলেই মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বিধিবিধানকে প্রতিনিয়তই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলেছি। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বিধিনিষেধের বিপরীতে অবস্থান করে আমরা যে নিজেদেরকে চরম ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছি সেদিকে কি আমাদের কোনো কর্ণপাত আছে?
আজ মুসলিমদের এই অধঃপতনের জন্য যে কয়েকটি কারণ দায়ী তন্মধ্যে অন্যতম হলো সমাজে যিনা-ব্যাভিচার অকল্পনীয় হারে বেড়ে যাওয়া। পরিতাপের বিষয়‚ সমাজের নীতিনির্ধারকেরা বাল্যবিবাহ নিয়ে সোচ্চার থাকলেও বর্তমান সময়ের ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশার (Free Mixing) নামে অশ্লীলতা নিয়ে তাদের কোনো প্রকার মাথাব্যথা নেই বললেই চলে। এসবের ফলস্বরূপ সমাজে নিত্যদিনই নানারকম অঘটন (যেমন : ধর্ষণ‚ ইভটিজিং) বেড়েই চলছে। সামাজিক অবকাঠামো পুর্নগঠন এবং সমাজ থেকে এসব ফিতনা-ফ্যাসাদ দূরীকরণে আমাদের মুসলিমদের করণীয়ই বা কী?
যেই বয়সে একটি ছেলে অথবা মেয়ে কোনো প্রকার সামাজিক বাধা-বিপত্তি ছাড়া দিব্যি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে পারে কিংবা অবাধ মেলামেশার নামে ছেলেমেয়েরা একত্রে মিলিত হয়ে রাতভর যেখানে-সেখানে আড্ডা দিতে পারে‚ সেই বয়সে কোনো দ্বীনদার ছেলে অথবা মেয়ে যারা দ্বীনকে অন্তর থেকে ভালোবাসে এবং দ্বীনকে সঠিকভাবে জীবনে বাস্তবায়ন করতে চায় যারা যদি সমাজে বিদ্যমান এসব ফিতনা থেকে নিজেকে বাঁচাতে ( অর্থাৎ নিজের চরিত্রকে হেফাজত করতে) বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায় তাহলেই আমাদের সমাজ তাদের সামনে একগাদা বিপত্তির দেয়াল নিয়ে এসে দাঁড়ায়। ছুঁড়ে দেয় নানান অযৌক্তিক প্রশ্নাবলী! যেমন :
১। সমাজ কর্তৃক নির্ধারিত বিয়ের জন্য উপযুক্ত বয়স (পঁচিশোর্ধ্ব বা তার অধিক) হয়েছে কি না? নাহলে কম বয়সে বিয়ে করে সমাজের মানুষের সমানে মুখ দেখাবে কি করে?
২। কম বয়সে বিয়ে করলে নাকি ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যায়? বিশেষ করে, লেখাপড়া শেষ না করে বিয়ে করলে?
৩। যে বিয়ে করতে চায় সে প্রতিষ্ঠিত কি-না অর্থাৎ তার চাকরি (উপার্জনের মাধ্যম) আছে কি না?
৪। যৌতুক না নিয়ে বিয়ে করতে চাইলেই কি পারা যায়?
বিয়ের কাবিনে লোক দেখানো মোটা অঙ্কের মোহরানা দিতে দ্বীনদার যুবকের অসম্মতি থাকবে কেন?
৫। বিয়ে যদি করতেই হয় তাহলে সমাজের প্রচলিত রীতিনীতিকে উপেক্ষা করে ইসলামী শরীয়া মোতাবেক করতে হবে কেন? ইত্যাদি...
এসব ভিত্তিহীন প্রশ্নের লক্ষ্য একটাই‚ দ্বীনকে মানতে গিয়ে সমাজকে পিছনে ফেলে সামনে ছুটে চলা যাবে না! তাই সামনে এগিয়ে যেতে হলে ডিঙাতে হবে এরকম নানাবিধ সামাজিক প্রাচীর। হায়‚ আফসোস !
বিয়ের ক্ষেত্রে যখনই আপনি সামাজিক রীতির উর্ধ্বে গিয়ে দ্বীনকে প্রাধান্য দিবেন তখনই সমাজের সাথে আপনার সংঘর্ষ লেগে যাবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার হুকুম মানতে গিয়ে আপনি যখন যৌতুককে না বললেন কিংবা সাধ্যের ভিতরে কম মোহরানা দিতে চাইবেন তখনই সমাজ আপনাকে তিরস্কার করবে।
কারণ‚ আপনার দ্বীনকে প্রাধান্য না দিয়ে সমাজের রীতিনীতিকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা ছিলো। আর ঠিক ঐ সময়ই আপনি পিছু হটতে বাধ্য হবেন কেননা সমাজের বিপরীতে অবস্থান করে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সৎসাহস সকলের থাকে না। পক্ষান্তরে‚ বিয়ের ব্যাপারে বর্তমান সমাজের অবিভাবকদের অবস্থাটাও খুব একটা ভালো না। তাই সহসাই অবিভাবকদের সহযোগিতা থেকেও বঞ্চিত হতে হয়। যাই হোক সেদিকে কথা না বাড়িয়ে আমরা একটু অন্যদিকে মনোনিবেশ করি।
দেখি তো‚ বিয়ে নিয়ে ইসলাম আসলে কি বলে?
বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে ইসলামের মতামতই বা কি?
শুরুতে বলতেই নয়‚ ইসলাম কেবলমাত্র একটি ধর্মই নয় বরং পূর্ণাঙ্গ একটি জীবনব্যবস্থা।
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত‚ রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন‚ “বিয়ে করা আমার সুন্নাত। আর যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত মোতাবেক কাজ করলো না‚ সে আমার উম্মত নয়। তোমরা বিয়ে করো‚ কেননা আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে অন্যান্য উম্মতের সামনে গর্ব করবো। অতএব যার সামর্থ্য আছে সে যেন বিয়ে করে এবং যার সামর্থ্য নেই সে যেন সিয়াম (রোজা) রাখে। কেননা‚ সাওম তার জন্য জৈবিক উত্তেজনা প্রশমনকারী।”
[সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৮৪৬]
অপর একটি হাদীসে বর্ণিত‚ “বিয়ের মাধ্যমে ঈমানের অর্ধেক পরিপূর্ণ হয়ে যায়‚ বাকী অর্ধেক পূর্ণ করতে হয় তাকওয়া (আল্লাহভীতি) দিয়ে।”
[বায়হাকী শুয়াবুল ঈমান‚ হাদীস নং : ৫৪৮৬]
অর্থাৎ বিয়ে : দ্বীনের অর্ধেক। বিয়ে না করলে ঈমান অর্ধেক অপূর্ণ থেকে যায়। বিয়ে করলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ঈমানকে পূর্ণতা দান করেন।
প্রথমতঃ বিয়ের ক্ষেত্রে আমরা যদি সঠিক বয়স নিয়ে কথা বলতে চাই তাহলে একটি কথা সুস্পষ্টভাবে বলা যায়‚ ছেলে-মেয়ে সাবালক হওয়া মাত্রই তারা বিয়ের জন্য উপযুক্ত বয়সে পদার্পণ করে ফেলে। তাই বিয়ের ক্ষেত্রে সমাজ কর্তৃক নির্ধারিত বয়সের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকার কোনো যৌক্তিক কারণ আমি অন্তত দেখছি না! তাছাড়া কম বয়সে বিয়ে করলে ক্যারিয়ার নষ্ট হয় না বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জীবনে সফলতা আসে। আশাকরি‚ একটু নিচে গেলেই বিষয়টি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবেন, ইন শা আল্লাহ !
দ্বিতীয়তঃ রিজিক নিয়ে যেহেতু আমাদের সমাজে সবচেয়ে বেশী দুশ্চিন্তা করা হয় সেহেতু রিজিকের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের সূরা হুদের ৬নং আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন‚
وَ مَا مِنۡ دَآبَّۃٍ فِی الۡاَرۡضِ اِلَّا عَلَی اللّٰہِ رِزۡقُہَا وَ یَعۡلَمُ مُسۡتَقَرَّہَا وَ مُسۡتَوۡدَعَہَا ؕ کُلٌّ فِیۡ کِتٰبٍ مُّبِیۡنٍ ﴿۶﴾
“আর ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নেই যাদের রিয্ক আল্লাহর যিম্মায় না রয়েছে, আর তিনি প্রত্যেকের দীর্ঘ অবস্থানের স্থান এবং অল্প অবস্থানের স্থানকে জানেন, সবই কিতাবে মুবীনে (লাউহে মাহফুযে) রয়েছে।”
- উপরোক্ত এ আয়াত থেকে এটুকু অন্তত বোঝা যায়‚ জমিনের প্রত্যেক প্রাণীরই রিজিকের জিম্মাদার একমাত্র সুমহান আল্লাহ। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় দুনিয়ার চিন্তায় আমরা এতটাই মত্ত যে‚ রিজিকের জিম্মাদার যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা একথা আমরা প্রায় অস্বীকার করতে বসেছি। আমরা বিশ্বাস করি চাকরির (অর্থাৎ রোজগারের) মাধ্যমে আমাদের রিজিক আসে! আর রিজিক মানে কি শুধুই খাওয়া-দাওয়া?
নেক জীবনসঙ্গী‚ নেক সন্তানসন্ততি‚ উত্তম আখলাক এবং নেককার বন্ধুও রিজিকের অন্তর্ভুক্ত নয় কি !
তাছাড়া রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি‚ “একজনের খাবার দু’জনের জন্য যথেষ্ট।”
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেই হাদীসটি নিম্নে তুলে ধরা হলো :
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الرَّقِّيُّ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ زِيَادٍ الأَسَدِيُّ، أَنْبَأَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ، أَنْبَأَنَا أَبُو الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " طَعَامُ الْوَاحِدِ يَكْفِي الاِثْنَيْنِ وَطَعَامُ الاِثْنَيْنِ يَكْفِي الأَرْبَعَةَ وَطَعَامُ الأَرْبَعَةِ يَكْفِي الثَّمَانِيَةَ.
জাবির বিন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত‚ রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : “একজনের খাবার দু’জনের জন্য যথেষ্ট, দু’জনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট এবং চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট হতে পারে।”
[সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩২৫৪, মুসলিম : ২০৫৯]
সুতরাং বিয়ে করে জীবনসঙ্গীকে কি খাওয়াবে সেই প্রশ্নে আমরা যদি কুরআন এবং হাদীসের দিকে আলোকপাত করি তাহলে কিন্তু খুব সহজেই অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীল উত্তর পেয়ে যাই। সুবহানাল্লাহ !
তৃতীয়তঃ প্রতিষ্ঠিত জীবনের দোহাই দিয়ে আমরা যারা বিয়েকে কঠিন বানিয়ে ফেলেছি তাদের জন্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা আন-নূরের ৩২নং আয়াতে বলেন‚
وَ اَنۡکِحُوا الۡاَیَامٰی مِنۡکُمۡ وَ الصّٰلِحِیۡنَ مِنۡ عِبَادِکُمۡ وَ اِمَآئِکُمۡ ؕ اِنۡ یَّکُوۡنُوۡا فُقَرَآءَ یُغۡنِہِمُ اللّٰہُ مِنۡ فَضۡلِہٖ ؕ وَ اللّٰہُ وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۳۲﴾
“তোমাদের মধ্যে যারা ‘‘আইয়িম’’ (বিপত্নীক পুরুষ বা বিধবা মহিলা) তাদের বিবাহ সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও। তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন; আল্লাহতো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।”
- আলোচ্য এ আয়াত থেকে এটুকু নিশ্চিত করে বলা যায়‚ বিয়ের মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা অভাব মোচন করে দেন এবং সেইসাথে জীবনে বারাকাহ (পার্থিব অর্থে সচ্ছলতা) দান করেন। এবার প্রশ্ন হলো‚ যেখানে স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা অঙ্গীকার করেছেন বিয়ে করলেই অভাবমুক্ত করে দিবেন সেখানে সমাজ কেনো প্রতিষ্ঠিতের দোহাই দিয়ে বিয়েকে কঠিন বানিয়ে দিয়েছে? তার মানে কি সমাজপতিরা আল্লাহর দেওয়া অঙ্গীকারকে অস্বীকার করে নাকি তারা এটা মানতে চায় না? কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাই তো বলছেন‚ বিয়ে করলে তিনি নিজ অনুগ্রহে তাকে (বান্দার) অভাবমুক্ত করে দিবেন।
আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দেওয়া প্রতিশ্রুতি তো কখনো মিথ্যা হতে পারে না !
চতুর্থতঃ বর্তমান সময়ে সমাজ সেই বিয়েকেই বেশী প্রাধান্য দেয়‚ যে বিয়েতে খরচ বেশী হয়। কারণ‚ সমাজের কাছে বিয়ে মানেই ধুমধাম পরিবেশ আর বাহারি রঙের বাতির ঝিলিক। না‚ সমাজের এই প্রথাটা সম্পূর্ণ সুন্নাহ পরিপন্থী। বিয়ে মানেই অহেতুক টাকা খরচ করা নয়। বরং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন‚ “সেই বিয়েতে বরকত বেশী যে বিয়েতে খরচ কম।”
[বায়হাকী ; মিশকাত : পৃষ্ঠা - ২৬৭]
মুসলমান হিসেবে কি আমাদের উচিত নয় কম খরচে বিয়ে সম্পন্ন করা ! কেননা‚ তাতেই তো আমাদের জন্য অধিক পরিমাণে বরকত নিহিত আছে।
তাহলে এবার প্রশ্ন হলো‚ জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে বিয়ের আয়োজন করে অহেতুক টাকার অপচয় করা কি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের পরিপন্থী নয়?
উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয় তাহলে একটু উপরে গিয়ে কষ্ট করে আরেকবার দেখে আসুন তো রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের (সুনানে ইবনে মাজাহ - এর ১৮৪৬ নং) সেই হাদীস খানা।
পঞ্চমতঃ মোহরানার বিধানে ইসলামের নির্দেশনা হলো‚ মোহরানা হচ্ছে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর হক (অধিকার)। স্বামী তার সাধ্যের ভিতরে যেটুকু স্বাচ্ছন্দ্যে তার স্ত্রীকে দিতে পারবে সেটাকেই ইসলাম সমর্থন দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন‚ “সর্বোত্তম বিয়ে (বা মোহর) হলো সেগুলো‚ যেগুলো সহজতর।”
[আলবানি‚ সহীহ আল জামে‚ হাদীস নং : ৩২৭৯]
তাহলে কি আমরা লোক দেখানো মোটা অঙ্কের মোহরানা নির্ধারণ করে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসের বিপরীতে নিজেদের দাঁড় করাচ্ছি না?
ভাবুন‚ আরেকবার তাহলে ভেবেই দেখুন !
আসুন এবার তাহলে দেখে আসা যাক শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রাপ্ত উপহারসামগ্রী‚ কি বলেন?
সময়ের ঘূর্ণাবর্তে আর কালের আবর্তে যৌতুকের নাম বদলিয়ে সমাজ সেটাকে উপহারসামগ্রী বলে আখ্যা দিচ্ছে। কি অদ্ভুত, তাই না !
সমাজ যতই বলুক না কেনো‚ বিয়েতে মেয়ের বাবা তো তার নিজের মেয়েকে যা দেওয়ার সেটা দিয়েছে এটা আবার যৌতুক হয় কিভাবে?
সমাজের বিপরীতে আপনাকে স্পষ্টভাবে বলে দিতে হবে সেটাই যৌতুক আর ইসলামে যৌতুক হারাম হিসেবে বিবেচ্য। যৌতুকের সাথে দুইটি গুনাহ সম্পর্কিত। যথা :
১। হারাম খাওয়ার গুনাহ।
২। শ্বশুরবাড়ির ওপর জুলুমের গুনাহ।
এবার তাহলে আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পালা। আপনি সামাজিক প্রথাকে প্রশয় দিবেন নাকি ইসলামের বিধিবিধানের আশ্রয় নিবেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে সঠিক জ্ঞান দান করেন, আমিন।
বিয়ের ক্ষেত্রে‚ মুসলিম ছেলে-মেয়েদের করণীয় :
বিয়ের পূর্বে আপনি কাউকে ভালোবাসতে পারবেন না, পছন্দ করতে পারবেন না এমন কোন নির্দেশনা সহীহ হাদীসে পাওয়া যায় না। তবে তার মানে আবার এটাও নয়‚ আপনি অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বেন।
আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত‚ মুগীরাহ বিন শু'বাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু এক মহিলাকে বিবাহ করার ইচ্ছা করলে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেন‚ “তুমি গিয়ে তাকে দেখে নাও। কেননা‚ তা তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।”
[সুনানে ইবনে মাজাহ‚ হাদিস নং : ১৮৬৫]
আধুনিক বিজ্ঞান বলে‚ আপনি বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হবেন - এটাই স্বাভাবিক। কেননা‚ এটা আপনার ফিতরাত। এজন্যই পবিত্র কুরআনের সূরা আর-রূমের ২১নং আয়াতে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন,
وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖۤ اَنۡ خَلَقَ لَکُمۡ مِّنۡ اَنۡفُسِکُمۡ اَزۡوَاجًا لِّتَسۡکُنُوۡۤا اِلَیۡہَا وَ جَعَلَ بَیۡنَکُمۡ مَّوَدَّۃً وَّ رَحۡمَۃً ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّتَفَکَّرُوۡنَ ﴿۲۱﴾
“এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে যাতে তোমরা তাদের সাথে শান্তিতে বাস করতে পার এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।”
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত‚ রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন‚ “তোমরা যে ব্যক্তির দ্বীনদারী ও নৈতিক চরিত্রে সন্তুষ্ট আছো; তোমাদের নিকট সে ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব করলে‚ তার সাথে বিয়ে দিয়ে দাও। তা যদি না করো তাহলে সমাজে ফিতনা-ফ্যাসাদ বৃদ্ধি পাবে এবং চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।”
[মিশকাত‚ হাদীস নং : ২৫৭৯ ; তিরমিজি‚ হাদীস নং : ১০৮৪]
- মূলত উক্ত হাদীস দ্বারা অবিভাবকদেরকে বিয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তির দ্বীনদারী ও নৈতিকতাকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য নাসীহাহ করা হয়েছে।
শেষ কথা একটাই‚ যেভাবেই হোক সমাজের গৎবাঁধা রীতিনীতিকে অতিক্রম করে ভঙ্গুর এই সমাজে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করতেই হবে। আমাদের জীবনকে সাজাতে হবে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের আদর্শে।
তবেই না এই জাগতিক জীবনে সফলতা আসবে...
বিয়ে : একটি পবিত্র বন্ধন !
|| ইসহাকুল হাসান ||
১১ই মে ২০২০
https://www.facebook.com/eshakulhaquehasan
Tags:
ইসলামিক